পর্ব ১ এর পরবর্তী অংশ
৪। মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখা।
وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ
তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে । [ সূরা আন-নূর ২৪:৩১ ]
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে বলেছেন তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে আর এটা বুঝাতে যেয়ে “খিমার” শব্দ ব্যবহার করেছেন। খিমার এমন কাপড়কে বলা হয় যা দিয়ে চেহারা, ঘাড়, বুক ইত্যাদি ঢেকে রাখা হয়। তাই নেশাজাতীয় দ্রব্যকে খিমার বলা হয় যেহেতু এটা বিবেকের ওপর পর্দা ফেলে দেয়। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আয়েশা (রাঃ) একটি হাদিস বলতেন, তা হলো “যখন কোরানের এই আয়াত নাজিল হল -তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে- নারীরা তখন তাদের ইজার (এক ধরণের পোশাক) নিয়ে মুখমন্ডল সহ সমস্ত শরীর আবৃত করলেন। [ বুখারী শরীফ , ৪৪৮১, আবু দাউদ শরীফ , ৪১০২]
ইবনে আলকামাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা হাফসা বিনতে আব্দুর রহমান ইবনে আবি বকর তার ফুফু উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) এর কাছে এলেন। তিনি এমন উড়না পড়েছিলেন যে তার ললাট/কপাল দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) সেই ওড়নাটি নিয়ে টেনে ছিড়ে ফেললেন। তারপর ধমকের স্বরে বললেন, আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরে কি বলেছেন তা কি তুমি জানো না? একথা বলে তিনি আরেকটি ওড়না এনে হজরত হাফসাকে পরিয়ে দিলেন। [ তবকাতে ইবনে সাদ ৮/৭২ ]
হজরত হাফসা (রাঃ) কপাল এবং ললাট অনাবৃত রেখেছিলেন সেটা আয়িশা (রাঃ) পছন্দ করেননি বিধায় অন্য একটি ওড়না দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলেন এবং দলিল হিসেবে সুরা নূরের এই আয়াত উল্লেখ করেন।
৫। সৌন্দর্য প্রদর্শন করোনা সূরা আন-নূর (২৪:৩১)
এবার আমরা আরো একটি আয়াতের দিকে দৃষ্টিপাত করব। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আল কোরানের সূরা নূরে উল্লেখ করেছেন:
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে – [ সূরা আন-নূর ২৪:৩১ ]
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীদের বলেছেন সাধারণভাবে যা প্রকাশ পায় সেটা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য যেন প্রকাশ না করা হয়। প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদি) , ইব্রাহিম নাখয়ী(রহঃ), ইবনে শিরিন (রহঃ) এই আয়াতের তফসীরে সৌন্দর্য প্রকাশ না করার অর্থ বুঝিয়েছেন মেয়েদের যেকোনো ধরণের সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে না অর্থ্যাৎ সমস্ত শরীর ঢেকে রাখতে হবে এবং এর মধ্যে মুখমন্ডলও অন্তর্ভুক্ত। আর সাধারণভাবে যা প্রকাশমান সেটা বলতে বুঝিয়েছেন একটি মেয়ে যত পর্দাই করুক কিছু বিষয় ঢেকে রাখতে পারবে না যেমন তার পোশাকের রং, সে খাটো না লম্বা, মোটা না চিকন ইত্যাদি। সুতরাং এগুলো স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পাবেই এবং এর জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে না। আলোচ্য আয়াতে এটাই বুঝানো হয়েছে এবং এই ব্যাখ্যা করেছেন রসুলুল্লাহর সম্মানিত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ। ইনি সেই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ যাকে খলীফাতুল মুসলিমিন উমর (রাঃ) কুফাতে পাঠিয়েছিলেন কুফাবাসীকে দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেওয়ার জন্য এবং পাঠানোর সময় বলেছিলেন “তোমরা দ্বীনি সমস্ত বিষয় তাকে অনুসরণ করে চলবে”। তদুপরি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) ছিলেন মুজতাহিদ সাহাবীগণের মধ্যে অন্যতম, যাদের অন্যান্য সাহাবীরা পর্যন্ত অনুসরণ করতেন।
কেউ কেউ বলে থাকেন সাধারণভাবে যা প্রকাশমান সেটা বলতে আসলে “হাত” ও “মুখ” বুঝিয়েছেন যা সাধারণত প্রকাশ পেয়ে থাকে। তাদের এই যুক্তি যদি সঠিক হয় তাহলে কিন্তু একটি মেয়ে যেকোনো অশ্লীল পোশাক পরেও বলতে পারেন যে আমার দ্বারা এটাই সাধারণভাবে প্রকাশ পায়। তখন আপনি তাকে কোন যুক্তিতে বুঝাবেন?
আরো একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তায়ালা সাধারণভাবে যা প্রকাশমান তা ছাড়া সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। এখন ধরে নিলাম “সাধারণভাবে প্রকাশমান” বলতে “হাত” , “মুখ” বুঝিয়েছে। কিন্তু আপনি যদি আয়াতের পরের অংশ গভীরভাবে খেয়াল করেন তাহলে কিন্তু আপনার নিকট প্রথম অংশ পরিষ্কার হয়ে যাবে। আয়াতের পরের অংশে বলা হয়েছে সৌন্দর্য প্রকাশ না করার জন্য। আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মেয়েদের সৌন্দর্যের মধ্যে মুখমন্ডলকে প্রধান ধরা হয়ে থাকে। কোনো ছেলে একটি মেয়ের দিকে তাকালে তার মুখমন্ডল দেখে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়ে থাকে। এইজন্য দেখা যায় বিবাহের সময় শুধুমাত্র মুখমন্ডল দেখেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাত্রপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় এখানে বিবাহ করা হবে কি হবে না। সুতরাং সৌন্দর্যের মধ্যে যদি ভোটাভুটি হয় তাহলে নিঃসন্দেহে নারীদের মুখমন্ডল প্রথম পর্যায়ে পড়বে। পৃথিবীতে কবি-সাহিত্যিকেরা মেয়েদের যে সৌন্দর্য নিয়ে কবিতা লিখেছেন সেগুলো যদি আপনি যাচাই বাছাই করেন তাহলে দেখবেন ৯০% কবিতাই তাদের মুখমন্ডলের সৌন্দর্য, চোখ, হাসি ইত্যাদি নিয়ে লেখা হয়েছে। এই আয়াতের তফসীরে অধিকাংশ তফসীরকারক মুখমন্ডলকে অবশ্যই আবৃত করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন।
রইসুল মুফাস্সিরীন হজরত ইবনে আব্বাস (রাদি) এর মত এই যে একজন নারী বাসায় থাকলে মুখ খোলা রাখতে পারবে কিন্তু যখন বাসার বাহিরে যাবে তখন হিজাব পরে নিবে বা মুখমন্ডল আবৃত করে নিবে। তফসীরের কিতাবসমূহে এই আয়াতের তফসীরে বলা হয়েছে নামাজের মধ্যে যে সমস্ত অঙ্গ ঢেকে রাখার হুকুম রয়েছে হাত ও মুখ তার অন্তর্ভুক্ত নয়। এটাই ইল্লা মা যাহারা দ্বারা বোঝানো হয়েছে। এবং এই আয়াত দ্বারাই অনেকে বলেছেন, “মাহরামের সামনে হাত ও মুখ ঢাকার প্রয়োজন নেই।” সুতরাং এই আয়াতকে সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ করার কোনো যুক্তি নেই।
আল কোরআনে নারীদের পর্দা বিষয়ে যদি আর কোনো আয়াত না থাকতো শুধুমাত্র এই আয়াত দ্বারাই প্রমান করা যেত যে নারীদের সমস্ত শরীর আবৃত করে পর্দা করা ফরজ। কেননা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যেহেতু সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে নিষেধ করেছেন আর একথা সর্জনবিদিত যে নারীদের সমস্ত শরীর সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। আসলে নারীদের সমস্ত শরীর শুধু নয়, তাদের চালচলন, কথাবার্তা ইত্যাদি সকল কিছুই সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। এইজন্য দেখা যায় কোনো নারীর একটি কথাতেই একটি ছেলের জীবনের মোড় ঘুরে যায়। কোনো নারী নুপুর বাজিয়ে হেটে চলে গেলে ২/৩ ঘন্টা পর্যন্ত অনেক তরুনের হৃদয়ের মধ্যে নুপুর বাজতে থাকে। এইজন্য নারীদেহের সমস্ত শরীর আবৃত করার মাধ্যমে, পরপুরুষের সাথে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কথা না বলার মাধ্যমে, সংযত চলার মাধ্যমে তথা ইসলাম যত উপায় দেখিয়ে দিয়েছে তার সমস্ত কিছু পালন করলেই সেটাকে প্রকৃত শরঈ পর্দা বলা যেতে পারে।
৬। মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন
وَقَرنَ في بُيوتِكُنَّ وَلا تَبَرَّجنَ تَبَرُّجَ الجاهِلِيَّةِ الأولىٰ
তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।
[ সুরাহ আহযাব ৩৩: ৩৩ ]
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ তায়ালা মূর্খতা যুগের মত সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। আর আপনি আরবের প্রাচীন ইতিহাস দেখলে বুঝতে পারবেন নারীরা অনাবৃত হয়ে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করতো। আমরা সৌন্দর্য প্রকাশ করাকে আধুনিকতার লক্ষণ বললেও আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এটাকে মূর্খতা যুগের লক্ষণ বলে উল্লেখ করেছেন।
বর্তমানে আমরা নারী স্বাধীনতার নামে, নারীর অধিকার এর নামে সিনেমা, নাটক, খেলাধুলা, বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা, নারী-পুরুষ একসাথে অভিনয় করা, এড প্রদর্শন করা, লাক্স ফটো সুন্দরী, বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা ইত্যাদি ডাল-ভাত এর পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। এতে মেয়েদের মর্যাদা বাড়েনি বরং তাদের পরিশ্রম দ্বিগুন হবার সাথে সাথে তাদের মর্যাদা তলানিতে এসে থেমেছে। মেয়েদের যতদিন সৌন্দর্য আছে ততদিন এই সব কর্পোরেট গ্রূপ, অ্যাড ফার্ম, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তাদের সমীহ করে থাকে। এইজন্য দেখা যায় একসময় মিডিয়াতে জনপ্রিয় থাকলেও শেষ বয়সে তাদের দেখার জন্য, আর্থিক সহযোগিতার জন্য কেউ পাশে থাকে না। অনেক তারকাকে দেখা যায় হাসপাতালের আইসিইউ তে জীবনের শেষ নিঃশেষ ত্যাগ করেন কিন্তু তাদের পাশে কেউ থাকে না। কিছুদিন আগে এক নায়িকাকে দেখা গেছে মারা যাবার পর পত্রিকায় খবর আসার কারণে সবাই জানতে পেরেছে এমন একজন নায়িকা একসময় জনপ্রিয় ছিল। বাস্তব এটাই। যতদিন তাদের সৌন্দর্য ছিল ততদিন তাদের প্রয়োজন ছিল। এটা কেমন স্বাধীনতা যার দরকার শুধুমাত্র যতদিন সৌন্দর্য থাকবে শুধুমাত্র ততদিন ?
৭। বৃদ্ধা নারীদের ক্ষেত্রে পর্দা শিথিল
وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاءِ اللاتِي لا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَنْ يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ وَأَنْ يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَهُنَّ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
“বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের অতিরিক্ত পোশাক খুলে রাখে। তাদের জন্যে দোষ নেই, তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ”।
[ সূরা আন-নূর ২৪:৬০ ]
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদি:) এই আয়াতে ব্যাবহৃত “কাপড়” শব্দের তফসির ‘ওড়না’ বা ‘চাদর’ করেছেন যা সাধারণত অতিরিক্ত পোশাক হিসেব ধরা হয়। কোনো নারী যদি সালোয়ার-কামিজ পরিধান করে তাহলে কখনো সেটাকে অতিরিক্ত কাপড় বলা হবে না। বরং এর ওপর ওড়না বা চাদর বা বোরকা আবৃত করলে সেটাকেই শুধুমাত্র বলা হবে পোশাকের ওপর অতিরিক্ত কাপড়। আল্লাহ তায়ালা এটাই এখানে বলেছেন যে কোনো বৃদ্ধা মহিলা যদি এই অতিরিক্ত কাপড় খুলে রাখে তাহলে তার গোনাহ হবে না। যেহেতু বলা হয়েছে বৃদ্ধা মহিলার ক্ষেত্রে এটা গোনাহ হবে না তাই স্বাভাবিকভাবেই এটা প্রমাণিত হয় যে বৃদ্ধা না হয়ে কম বয়সের হলে সেইসকল নারীর ক্ষেত্রে এটা অবশ্যই গোনাহ হবে।
নিম্নলিখিত সাহাবী, তাবেয়ী গণ উপরোক্ত কাপড়কে ওড়না হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।
১। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)
২। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)
৩। হজরত মুজাহিদ (রহঃ)
৪। হজরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহঃ)
৫। হজরত আবুশ শাসা (রহঃ)
৬। হজরত ইব্রাহিম নখয়ী (রহঃ)
৭। হজরত হাসান (রহঃ)
৮। হজরত কাতাদাহ (রহঃ)
৯। হজরত ইমাম যুহরী (রহঃ)
১০। ইমাম আওযায়ী (রহঃ) সহ আরো অনেকে।
এই আয়াত শরীফে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বৃদ্ধা নারীদের ক্ষেত্রে বলেছেন যে যদি তারা অতিরিক্ত পোশাক খুলে রাখে তাহলে দোষ নেই কিন্তু তারপরেও ১টি শর্ত দিয়েছেন। শর্তটি হলো তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে না।
“বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের অতিরিক্ত পোশাক খুলে রাখে। তাদের জন্যে দোষ নেই”
এর অর্থ হলো যদি অতিরিক্ত পোশাক খুললে কোনো বৃদ্ধা মহিলার সৌন্দর্য প্রকাশ পাবার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তার ক্ষেত্রে সেটাও নিষেধ। প্রিয় পাঠক আপনি যদি এই কথাগুলো বুঝতে না পারেন তাহলে আবার আয়াতটি পড়ুন এবং উপরোক্ত ব্যাখ্যাটি পড়ুন। বৃদ্ধা মহিলার ক্ষেত্রেও যদি সৌন্দর্য প্রকাশ করা নিষেধ থাকে তাহলে কিভাবে সম্ভব কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে মুখমন্ডল খোলা রেখে সৌন্দর্য প্রকাশ করা জায়েজ হতে পারে?
৮। গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে।
وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُون
“তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও”। [ সূরা আন-নূর - ২৪:৩১ ]
এখানে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন, মেয়েরা পায়ের মাধ্যমে জোরে শব্দ করে যেন চলাফেরা না করে যাতে তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ পায়। বুঝা গেলো পায়ের মাধ্যমে জোরে শব্দ করলে সেটাও সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত এবং আল্লাহ তায়ালা তা পছন্দ করেনি। অনেক সময় দেখা যায় মেয়েরা জুতা পরে শব্দ করে চলতে থাকলে পুরুষরা ঠিকই তাদের দিকে প্রলুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কেউ কেউ বলে থাকেন আসলে মেয়েদের পায়ের আঘাতের শব্দ শুধু মাটিতে নয় আমাদের হৃদয়েও হচ্ছে। বিষয়টা আসলেই তেমনিই। যাদের সত্য প্রকাশের সাহস আছে তারা এগুলো অবশ্যই স্বীকার করবেন। এখন কথা হল শুধুমাত্র পায়ের মাধ্যমে জোরে শব্দ করে চলাচল করা হলে সেটা যদি সৌন্দর্য প্রকাশ করা হয়ে থাকে তাহলে “মুখমন্ডল” খোলা রেখে চলাচল করলে সেটা আরো কয়েকশ গুন্ সৌন্দর্য প্রকাশ করা হয়ে থাকবে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমন নিশ্চয়ই কেউ বলবে না যে পায়ের শব্দ সৌন্দর্য হলেও মুখমন্ডল সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর যেহেতু মেয়েদের সমস্ত রকম সৌন্দর্য গায়রে মাহরামদের সম্মুখে প্রকাশ করা নিষেধ। তাই এই হিসেবে মুখমন্ডল প্রকাশ করাও এই নিষেধের আওতাভুক্ত হবে, যেহেতু মুখমন্ডলও সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।
একটি উদাহরণ দেয়া যাক। মনে করুন একজন বাবা তার সন্তানকে বাজার করতে পাঠাচ্ছেন এবং বাজারে যাবার সময় সন্তানকে উপদেশ দিলেন “তুমি কখনো কারো সাথে ঝগড়া করবে না, কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবে না”। ছেলেটি বাবার কথায় রাজি হয়ে বাজার করতে চলে গেল। পথিমধ্যে এলাকার একটি দুষ্টু ছেলেকে সে মারধর করলো। মারামারি শেষ করে সে বাসায় ফেরত আসলো। বাবা জানতে পেরে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন কেন সে ছেলেটিকে মেরেছে? ছেলেটি বলল আপনি তো আমাকে খারাপ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন কিন্তু মারতে তো নিষেধ করেননি? তাই ঝগড়া না করে ছেলেটিকে আমি প্রহার করেছি। এই হাস্যকর উক্তি শুনে বাবা বললেনঃ কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করা সেটা একটা অপরাধ কিন্তু কারো গায়ে আঘাত দেওয়া এর চেয়ে অনেক বড় অপরাধ। তোমাকে যেহেতু ছোট অপরাধ (খারাপ ব্যবহার) করতে নিষেধ করেছি তাই স্বাভাবিকভাবেই এটা বোঝা যায় যে এর চেয়ে অনেক বেশি অপরাধ কারো গায়ে আঘাত করা এবং সেটা অবশ্যই আরো বেশি করে নিষেধ। সুতরাং এটা তোমার স্বাভাবিকভাবেই বোঝা উচিত ছিল।
এখানে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা মেয়েদের পায়ের শব্দ সৌন্দর্য-এর অন্তর্ভুক্ত বলেছেন এবং এই কারণে এই সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। তাহলে স্বাভাবিকভাবে এর চেয়ে আরো অনেক বেশি সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত মেয়েদের মুখমন্ডল সেটা প্রকাশ করাও যে স্বাভাবিকভাবে নিষেধ হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
— ২য় পর্ব সমাপ্ত —-

Leave a Comment

নিচে কমেন্ট বক্স এ আপনার মূল্যবান মতামত দিন। যা লেখকের অনুপ্রেরণা জোগাবে ইনশা-আল্লাহ।