গুগল এডসেন্স পাওয়ার জন্য সর্বস্তরের ব্লগাররা চেষ্টা করে কিন্তু সবাই সফল হতে পারে না। ব্লগিং করে গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করার জন্য প্রথমে গুগল এডসেন্স অনুমোদন করে নিতে হবে। সেই জন্য প্রথমত গুগল এডসেন্স পাওয়ার উপায় জেনে নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে বার বার আবেদন করা সত্বেও এডসেন্স অনুমোদন হবে না।


গুগল এডসেন্স কি এবং কিভাবে কাজ করে সে বিষয়ে ইতোপূর্বে আমাদের ব্লগে একটি বিস্তারিত পোস্ট শেয়া করেছি। তাছাড়া কিভাবে গুগল এডসেন্স একাউন্ট তৈরি করতে হয় সে বিষয়েও আমরা একটি পোস্ট শেয়ার করেছি। সুতরাং গুগল এডসেন্স বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য এবং একটি এডসেন্স একাউন্ট তৈরি করার জন্য পোস্ট দুটি পড়ে নিবেন। 

আমরা জানি যে, AdSense অনলাইন ভিত্তিক সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনি সংস্থা। তাদের বিজ্ঞাপনের উচ্চ মূল্যের ক্লিক রেট এবং আরও বিশেষ সুবিধা জন্য সব ধরনের ব্লগার ও আর্টিল রাইটার তাদের ব্লগে এডসেন্স ব্যবহার করে অনলাইনে ইনকাম করতে চায়। তবে অধিকাংশ ব্লগারদের অজ্ঞতার কারনে গুগল এডসেন্স অনুমোদন করতে ব্যর্থ হয়।
অথচ সামান্য কিছু টিপস অনুসরণ এবং ধৈর্য ধারণ করে চেষ্টা করলে খুব সহজেই অল্প দিনে গুগল এডসেন্স অনুমোদন করা যায়। গুগল এডসেন্স পাওয়ার জন্য এডসেন্স আবেদন করার পূর্বে ও পরে কী কী করতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আজকের পোস্ট পড়লে আপনি এডসেন্স পাওয়ার পাওয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

এডসেন্স আবেদন করার পূর্বে করনীয় কি?

যারা ব্লগিং করে তাদের মধ্যে অধিকাংশ লোক কোন কিছু না বুঝে ব্লগে কয়েকটি পোস্ট পাবলিশ করে গুগল এডসেন্স একাউন্ট তৈরি করে এডসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করে। কিন্তু আবেদন করার পর বার বার আবেদন Reject হয়। নিচের টিপস গুলো অনুসরণ করার পর এডসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করলে আপনি সহজে এডসেন্স পেয়ে যাবেন।

০১। কাষ্টম ডোমেইন

এডসেন্স পাওয়ার জন্য ডোমেইন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অধিকাংশ নতুন ব্লগার তাদের ব্লগে সাব-ডোমেইন (Blogspot.com) ব্যবহার করে গুগল এডসেন্স পাওয়অর জন্য আবেদন করেন। যার ফলে দেখা গুগল তাদের আবেদন সরাসরি নাকুচ করে দেয়। এক সময় ছিল যখন Sub-Domain দিয়েও খুব সহজে AdSense অনুমোদন করা যেত, কিন্তু সম্প্রতি এ বিষয়টি খুব বেশী কঠিন হয়েগেছে। কাজেই বিষয়টি সহজ করার জন্য প্রথমে একটি ভালমানের Custom Domain কিনে নিতে হবে।

০২। ব্লগের বয়স

এডসেন্স পাওয়ার জন্য ব্লগের বয়স আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এডসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করার আগে আপনার ডোমেইনের বয়স কমপক্ষে ২/৩ মাস হতে হবে। তবে ডোমেইনের বয়স ৬ মাস হওয়ার পর AdSense এর আবেদন করাটা সবচেয়ে ভাল। তাছাড়া এশিয়ার বেশ কিছু দেশ রয়েছে যাদের ক্ষেত্রে ব্লগের বয়স ৬ মাস না হওয়া পর্যন্ত এডসেন্স পাওয়ার আবেদন করার সুযোগই পাওয়া যায় না।

০৩। ব্লগ ডিজাইন

ব্লগের থিম অবশ্যই User Friendly এবং দেখতে আকর্ষণীয় হতে হবে। পাঠকরা যাতে সহজে যে কোন ধরনের বা সাইজের ডিভাইস থেকে ব্লগের আর্টিকেল সহজে পড়তে পারে। তাছাড়া আপনার ব্লগটির Loading Speed অবশ্যই ভাল হতে হবে। তা না হলে Slow গতীর ব্লগে কোনভাবেই আশানুরূপ ভিজিটর পাবেন না। এটা আপনার এডসেন্স পেতে বাধা তৈরি করবে।

০৪। সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি ব্লগ

আপনার ব্লগের থিম ও প্রত্যেকটি পোষ্ট সার্চ ইঞ্জিন Friendly হতে হবে। এটি যে কোন ব্লগকে দ্রুত এডসেন্স অনুমোদন পেতে সাহায্য করবে। তাছাড়া হগুগল এডসেন্স এর Robot রয়েছে, যেটি আপনার ব্লগকে স্ক্যান করে নেবে। এ ক্ষেত্রে ব্লগের প্রত্যেকটি পোষ্ট সার্চ ইঞ্জিন Friendly না হলে AdSense অনুমোদন করবে না। তাহলে অবশ্যই অন পেজ এসইও এর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

০৫। পর্যাপ্ত আর্টিকেল

একটা কথা মনে রাখবেন সবকিছুর মূলেই হচ্ছে ব্লগের আর্টিকেল। আপনার ব্লগে যত ভালমানের Content থাকবে তত বেশি ভিজিটর পাবেন। কাজেই নিয়মিত ভালমানের কনটেন্ট শেয়ার করতে হবে। গুগল এডসেন্স পাওয়ার আবেদন করার পূর্বে আপনার ব্লগে কমপক্ষে ২০/২৫ টি ভালমানের ইউনিক পোষ্ট থাকতে হবে। ব্লগের প্রত্যেকটি Categories এ কমপক্ষে ৫ টি করে পোষ্ট হতে হবে।

০৬। প্রতিটি পোস্টে পর্যাপ্ত কনটেন্ট

প্রত্যেক পোষ্টে অবশ্যই পরিমানমত লেখা থাকতে হবে। শুধু কোনো রকম ২০/২৫ টি পোষ্ট করলেই আপনি গুগল এডসেন্স পাওয়ার আশা করতে পারবেন না। গুগল বট আপনাকে এডসেন্স অনুমোদন দেয়ার আগে এটাও জেনে নেবে যে, প্রত্যেকটি পোষ্টে কি পরিমান লেখা রয়েছে। প্রতিটি পোষ্ট মিনিমাম ৫০০/৬০০ টি ভালমানের Words এর সমন্বয়ে হতে হবে।

০৭। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেজ

ব্লগের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ Pages যেমন- About Us, Privacy Policy এবং Contact Us পেজ রাখা আবশ্যক। কয়েক বৎসর আগে Google AdSense Team একটি নিয়ম করেছিল যে, প্রত্যেকটি ব্লগের অবশ্যই Privacy Policy পেজ রাখতেই হবে। তারই নিয়মে অবশ্যই বাকি পেজগুলিও রাখাটা ভাল।

০৮। নাম, বয়স এবং ইমেইল

আপনার নাম, বয়স এবং ইমেইল এড্রেস অবশ্যই Google Account এবং Contact Us পেজে ব্যবহার করবেন। এতেকরে গুগল এডসেন্স টিম আপনার আবেদন রিভিউ করার সময় সহজে আপনার নাম, বয়স এবং ইমেইল এড্রেস সম্পর্কে নিশ্চিত হবে পারবে। তাছাড়া গুগল এডসেন্স পাওয়ার আবেদন করার জন্য আপনার বয়স অবশ্যই ১৮ বৎসর হতে হবে।

০৯। সার্চ ইঞ্জিন হতে ভিজিটর

সার্চ ইঞ্জিন হতে ভিজিটর পেলে ব্লগের জন্য গুগল এডসেন্স পাওয়া আরোও সহজ হয়ে যায়। কারণ যে ব্লগে গুগল সার্চ ইঞ্জিন হতে ভিজিটর আসে সে ব্লগকে গুগল বেশী পছন্দ করে। কাজেই সার্চ ইঞ্জিন হতে ভিজিটর পাওয়ার জন্য ভালভাবেSEO অনুসরণ করতে হবে। আপনার ব্লগে যদি ভিজিটর কম থাকে তাহলে AdSense পাওয়ার আশা করতে পারেন না। ব্লগে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০/৩০০ ইউনিক ভিজিটর থাকলে গুগল এডসেন্স পাওয়া সহজ হয়।

১০। অন্য বিজ্ঞাপন না দেওয়া

আপনার ব্লগে যদি অন্য কোন ধরনের PPC বিজ্ঞাপন ব্যবহার করেন তাহলে গুগল এডসেন্স পাওয়ার আবেদন করার পূর্বে তা সরিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় গুগল আপনার ব্লগে AdSense অনুমোদন করবে না। কারণ Google AdSense তাদের বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি অন্য কোন ধরনের বিজ্ঞাপন দেখাতে পছন্দ করে না। তবে এডসেন্স অনুমোদন হওয়ার পর অন্যান্য বিজ্ঞাপন ব্যবহার করতে পারবেন।

গুগল এডসেন্স পাওয়ার উপায়

উপরের সবগুলো শর্ত ফিলআপ করার পর আপনি গুগল এডসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে আরো কিছু টিপস অনুসরণ করতে হবে। তাহলে আপনি সহজে গুগল এডসেন্স অনুমোদন পাবেন।

১। প্রতিদিন নতুন কনটেন্ট লিখা

এই কাজটি যে কোন ব্লগকে সার্চ ইঞ্জিনের কাছে অধিক গ্রহনযোগ্য করে তুলবে। সার্চ ইঞ্জিন রোবট প্রতিনিয়তই নতুন আর্টিকেল Index করার জন্য প্রস্তুত থাকে। যখনই কোন ব্লগে ভালমানের নতুন কনটেন্ট পায় সাথে তা গ্রহন করে নেয়। আপনি যদি ব্লগে মাসে মাত্র ৩/৪ টি পোষ্ট করেন তাহলে আপনার ব্লগ সার্চ রোবটদের মনোযোগ কিছুতেই আকর্ষন করতে পারবে না।

যার ফলে দেখা যাবে যে ৩/৪ টি পোষ্ট মাসে শেয়ার করছেন সেটিও Index হবে না। আর ব্লগের কনটেন্ট Index না হলে ভিজিটর পাওয়ার পরিমান প্রায় শূন্যের কোটায় চলে আসবে। ব্লগে ভিজিটর কমে যাওয়ার মানে হচ্ছে Google AdSense অনুমোদন পাওয়ার আশা ছেড়ে দেয়া।

২। ভাল মানের কনটেন্ট

আমি প্রায়ই এই কথাটি সবাইকে পরামর্শ দিয়ে থাকি যে, ব্লগে সব সময় ভালমানের ইউনিক কনটেন্ট শেয়ার করতে। কারণ ব্লগে ভিজিটর পাওয়ার জন্য সহজ ও প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ভালমানের কনটেন্ট। আপনি যখন ব্লগে নিত্য নুতন ভালমানের কনটেন্ট শেয়ার করবেন তখন এই কনটেন্টই আপনার ব্লগে ইউনিক ভিজির নিয়ে আসবে।

আর যখন ভিজিটররা আপনার ব্লগ পড়ে ভালমানের কনটেন্ট পাবে তখন ব্লগের আরও কনটেন্ট পড়বে এবং তারা পুনরায় আপনার ব্লগ ভিজিট করবেই। অন্যের ব্লগ থেকে কনটেন্ট কপি করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। কপি করা কনটেন্ট দিয়ে আপনি কোন দিন গুগল এডসেন্স অনুমোদন করতে পারবেন না।

৩। এসইও ফ্রেন্ডলি পোস্ট লেখা

আপনার ব্লগে যে কোন ধরনের কনটেন্ট লিখেন না কেন আর্টিকেল অবশ্যই SEO Friendly হতে হবে। এসইও ফ্রেন্ডলি পোস্ট বলতে অনেক জিনিসকেই বুঝায়। যেমন ধরুন- পোষ্টের টাইটেল ভালভাবে লিখা, পোষ্টের ভীতরে ভালমানের কনটেন্ট শেয়ার করা, বানান সঠিকভাবে লিখা, পোষ্টের ভীতরের ছবিগুলির Alt ট্যাগ দেয়া, প্রতিটি পোষ্টের ম্যাটা ট্যাগ এর বর্ণনা ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়।

এ সমস্ত বিষয়গুলো যখন ভালভাবে অনুসরণ করবেন তখন সার্চ ইঞ্জিন সহজে আপনার ব্লগের প্রতিটি পোষ্টের ভাষা বুঝে নিতে পারবে। এ বিষয়টি আপনার ব্লগকে সার্চ ইঞ্জিনের কাছে গ্রহনযোগ্যও করে তুলবে। আর সার্চ ইঞ্জিনের কাছে ভাল হতে পারা মানে হচ্ছে গুগল এডসেন্স পাওয়ার পথ সুগম হওয়া।

৪। ইউনিক ভিজিটর

প্রতিনিয়তই যখন আপনার ব্লগে নতুন নতুন ভিজিটর আসবে তখন ব্লগটি সবার কাছে পরিচিত হতে থাকবে। সাথে সাথে সার্চ ইঞ্জিনের কাছেও আপনার ব্লগের বিষয় বস্তু সম্পর্কে পরিষ্কার হতে থাকবে। ইউনিক ভিজিটর এর ভীতরেও অনেক বিষয় রয়েছে।

যেমন ধরুন- কেউ আপনার ব্লগ ভিজিট করল কিন্তু কোন ভালমানের টপিক না পেয়ে সাথে সাথে চলে গেল, এ ক্ষেত্রে গুগল সার্চ ইঞ্জিন এ ধরনের ভিজিটরদের ইউনিক ভিজিটর হিসেবে গন্য করবে না। আপনার ব্লগে নিত্য নতুন ভিজটরদের যত বেশী সময় অবস্থান করাতে পারবেন, ব্লগের ইউনিক ভিজিটর তত বাড়তে থাকবে। গুগল এডসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে ইউনিক ভিজিটর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

৫। এডসেন্স Policy অনুসরণ

এ ছাড়াও গুগল AdSense এর বেশ কিছু নিয়মনীতি রয়েছে। অনেক ব্লগার আছেন যারা কখন গুগল AdSense Policy পড়ে দেখেননি। অথচ তারা যথাসময়ে গুগল এডসেন্স পাওয়ার আবেদন করছেন। গুগল এডসেন্স পাওয়ার আবেদন করার পূর্বে অবশ্যই AdSense পলিসি ভালভাবে পড়ে নিবেন।

পলিসি পড়ার পর যদি মনেকরেন যে, আপনার ব্লগটি AdSense এর সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই হয়েছে তাহলে AdSense এর জন্য আবেদন করবেন। তা না হলে গুগল এডসেন্স এর আবেদন করা থেকে বিরত থাকবেন। AdSense এর নিয়মের সাথে যে বিষয়গুলো না মেলে সেগুলো Correction করে নিয়ে প্রয়োজনে আরও কিছু দিন পরে আবেদন করবেন।

এডসেন্স অনুমোদন না হওয়ার কারণ

বর্তমান সময়ের অনেক ভালমানের ব্লগার আছেন যারা বার বার গুগল এডসেন্স পাওয়ার আবেদন করে অনুমোদন করতে না পেরে হতাশ হচ্ছেন। কিছু লোক চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে আবার অনেকে কিছুতেই ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারছে না। যারা বার বার আবেদন করেও Adsense পাচ্ছে না তাদের জন্য ১০ টি প্রধান কারণ শেয়ার করছি। এ গুলো নিশ্চয় আপনার ব্লগের ভূলগুলোকে সংশোধন করতে সাহায্য করবে।

১। ব্লগের বয়স কম হওয়া

গুগল এডসেন্স পাওয়ার আবেদন করার পূর্বে আপনার ব্লগের/ওয়েবসাইটের বয়স কমপক্ষে ৬ মাস হতে হবে। বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশের কোন জায়গা থেকে আবেদন করার জন্য ব্লগের বয়স ৬ মাস পূর্ণ না হওয়া অবধি আবেদন করাই সম্ভব হয় না। কাজেই ব্লগের বয়স ৬ মাস পূর্ণ হওয়ার পরে Adsense এর জন্য আবেদন করা উচিত।

২। অপর্যাপ্ত কনটেন্ট

একটি ব্লগ পরিচালনা করার জন্য কনটেন্ট হচ্ছে তার প্রাণ। আপনার ব্লগে যত ভালমানের Content থাকবে তত বেশী ভিজিটর পাবেন। এডসেন্স পাওয়ার আবেদন করার পূর্বে আপনার ব্লগে কমপক্ষে ২০/২৫ টি ভালমানের ইউনিক পোষ্ট থাকতে হবে। ব্লগের প্রত্যেকটি Categories এ কমপক্ষে ৫ টি করে পোষ্ট হতে হবে। কারণ Adsense কর্তৃপক্ষ আপনার ব্লগটিকে অনুমোদন করা পূর্বে ভালভাবে যাচাই করে দেখবে ব্লগের পর্যাপ্ত পরিমানে কনটেন্ট আছে কি না।

৩। কোয়ালিটি কনটেন্ট না থাকা

ব্লগে শুধুমাত্র পর্যাপ্ত কনটেন্ট থাকলেই হবে না, পোষ্টগুলো অবশ্যই ভালমানের হতে হবে। আপনি যদি ব্লগিং ‍শুরু করার পূর্বে মনেকরে থাকেন যে, ভবিষ্যতে আপনার ব্লগে গুগল এ্যাডসেন্স ব্যবহার করে অনলাইন হতে আয় করবেন, তাহলে অবশ্যই এমন বিষয় নিয়ে লিখা শুরু করবেন যার মূল্য সার্চ ইঞ্জিনসহ সকল ধরনের পাঠকের কাছে রয়েছে। আপনার ব্লগে যখন ভালমানের কনটেন্ট থাকবে তখন ব্লগটি সবার কাছে গ্রহনযোগ্য হবে। 

৪। ইউনিক কনটেন্ট না থাকা

এটি ব্লগিং এবং গুগল এ্যাডসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কমন ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই বিষয়টির ভীতরের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য কেউই ভালভাবে বুঝতে চান না বা বুঝতে সক্ষম হন না। অনেকের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার হয় না যে, আসলে ইউনিক কনটেন্ট বলতে কি? বেশীরভাগ লোকই মনেকরে কারও ব্লগ থেকে কপি করা কনটেন্ট ব্যবহার না করলেই সেটি ইউনিক কনটেন্ট হয়।

মূলত বিষয়টির পরিপূর্ণ অর্থ এ ভাবে হচ্ছে না। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই আপনার ব্লগের প্রত্যেকটি পোষ্ট অন্যের ব্লগ থেকে কপি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ইউনিক কনটেন্ট বলতে সেটাকে বুঝাবে, যেটির বিষয়বস্তু অন্য কারও সাথে কোনভাবেই মিলছে না। এখন আপনি হয়ত বলবেন আমি যেহেতু কারও কোন কনটেন্ট কপি করিনি তাহলে কথাত এটাই হচ্ছে। এ জন্য আমি বিষয়টি উদাহরনের মাধ্যমে আরও পরিষ্কার করছি।

ধরুন-আপনি হিন্দি সিনেমার রিভিউ নিয়ে ব্লগিং করেন। এ ক্ষেত্রে আপনি “দিলওয়ালে” সিনেমার একটি পূর্ণাঙ্গ রিভিউ নিজের ভাষায় বর্ণনা করলেন। তখন আপনি বলবেন এটি সম্পূর্ণ আপনার নিজের ভাষায় লিখা একটি ইউনিক কনটেন্ট, কিন্তু আপনি হয়ত জানেন না এর পূর্বে “দিলওয়ালে” সিনেমার পরিচালক তাদের অফিসিয়াল ব্লগে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিভিউ দিয়েছেন।

এ ক্ষেত্রে কোনভাবেই আপনার কনটেন্ট ইউনিক হতে পারে না। এখানে তাদের অফিসিয়াল রিভিউ সবার কাছে হবে ইউনিক এবং সবচাইতে গ্রহনযোগ্য। এ ভাবে প্রত্যেকটা বিষয়ের ক্ষেত্রে একই অর্থ দাড়াবে। ইউনিক বলতে কেবল ঐ বিষয়টাকে বুঝাবে যেটি কারও সাথে কোনভাবেই মিলে না। আপনি যদি ২০/২৫ ইউনিক কনটেন্ট শেয়ার করতে পারেন তাহলে এডসেন্স একাউন্ট অনুমোদন হবেই হবে।

৫। অনুপযুক্ত কনটেন্ট

কিছু কনটেন্ট রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করা গুগল এডসেন্স কনটেন্ট Policy এর বাহিরে। যেগুলো ব্যবহার করলে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হতে পারে। এ ধরনের কনটেন্ট ব্যবহার করে যত ট্রাফিক পান না কেন ব্লগের Adsense অনুমোদন হবে না। নিচে দেখুন-
  • পর্ণগ্রাফি/Adult কনটেন্ট।
  • হ্যাকিং বা ক্রাকিং টিপস।
  • থার্ড পার্টি ভিডিও শেয়ারিং ব্লগ।
  • বিভিন্ন মাদক জাতীয় দ্রব্যের প্রচার বা প্রসার।
  • Alcohol দ্রব্যের প্রতি আকৃষ্ট করা।
  • পরস্পর বিরোধী কনটেন্ট।
  • মারাত্মক অস্ত্রের বিজ্ঞাপন।

৬। পর্যাপ্ত ট্রাফিক না থাকা

আপনার ব্লগে যদি পর্যাপ্ত ট্রাফিক না থাকে তাহলে কোনভাবেই এডসেন্স অনুমোদন হবে না। ব্লগে যখন পর্যাপ্ত পরিমানে Organic ট্রাফিক থাকবে তখন খুব সহজেই এ্যাডসেন্স অনুমোদন হবে। কারন গুগল চায় এমন কাউকে এ্যাডসেন্স একাউন্ট দিতে যার ব্লগের মাধ্যমে তারা ভিজিটরদের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে লাভবান হতে পারে।

আপনি যখন ভালভাবে SEO মেনে ভালমানের ইউনিক কনটেন্ট শেয়ার করবেন তখন ট্রাফিক অটোমেটিক্যালি বাড়তে থাকবে। তবে একটা ব্যাপার মনে রাখবেন কোন প্রকার Paid Traffic মাধ্যমে ভিজিটর বৃদ্ধি করে কোন লাভবান হতে পারবেন না। যখন কোন প্রকার সোসিয়াল মিডিয়া ছাড়া শুধুমাত্র গুগল সার্চ ইঞ্জিন হতে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিজিটর পাবেন তখন Adsense আপনাকে সহজে অনুমোদন করবে।

৭। ব্লগের ডিজাইন ভাল না হওয়া

আপনি যখন কোন ব্যবসা শুরু করবেন তখন অবশ্যই আগে আপনার দোকান বা ব্যবসার জায়গাটি ভালভাবে সাজিয়ে চক-চকে করে নেবেন। তারপর ব্যবসা করার প্রয়োজনীয় উপকরন দোকানে বসাবেন। ব্লগের বিষয়টি ঠিক সে রকম। আপনার ব্লগটি যদি ভাল ডিজাইনের না হয় এবং Google Adsense কোড বসানোরমত পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে তাহলে কিছুতেই এ্যাডসেন্স অনুমোদন করবে না। 

কারণ আপনার ব্লগের প্রয়োজনীয় জায়গায় বিজ্ঞাপন বসিয়ে পরিষ্কারভাবে ভিজিটরদের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করাতে না পারলে তাদের কোন লাভ হবে না। কাজেই ব্লগের ডিজাইন অবশ্যই Responsive, স্বচ্ছ এবং Adsense Ad ব্যবহারের উপযোগী হতে হবে।

৮। টপ লেভেলে ডোমেইন ব্যবহার না করা

এখনকার সময়ে Google AdSense অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে Domain অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এক সময় ছিল যখন Sub-Domain দিয়েও খুব সহজে AdSense অনুমোদন করা সম্ভব হত, কিন্তু সম্প্রতি এ বিষয়টি বেশ কঠিন হয়েগেছে। কাজেই বিষয়টি সহজ করার জন্য ব্লগিং শুরু করার পূর্বে একটি ভালমানের Custom Domain কিনে নেয়াটাই উত্তম হবে।

৯। Advanced ট্রিকস

এ ছাড়াও গুগল এডসেন্স অনুমোদন না হওয়ার আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেগুলো সম্পর্কে এখন বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব নয়। নিচে আমরা সংক্ষেপে বিষয়গুলি তুলে ধরছি।
আবেদনকারীর বয়স ১৮ বৎসর না হওয়া।
  1. Evil সাইটে ব্লগের লিংক করা থাকলে।
  2. সাইট Malware এ আক্রান্ত হলে।
  3. ব্লগটির প্রকৃত মালিক নিজে না হলে।
  4. ব্লগের Navigation সহজে বুঝা না গেলে।
  5. বাচ্ছাদের Privacy Protection Act এর বহিঃভূত হলে।
  6. ব্লগের কনটেন্টের ভাষা সাপোর্ট না করলে।
  7. পূর্বে কখন Adsense Account ব্যান হলে।
  8. সঠিকভাবে Adsense Policy অনুসরণ না করলে।

কেন এডসেন্স আবেদন দীর্ঘ দিন Review থাকে

গুগল এ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করার পর এ্যাডসেন্স একাউন্ট অনুমোদন করা বা অনুমোদন না করার বিষয়ে কোন ইমেল না পাওয়া অত্যান্ত কমন একটি সমস্যা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় এ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করার পর গুগল এ্যাডসেন্স টিম একাউন্টের এর বিষয়ে কোন ধরনের উত্তর না দিয়ে রিভিউ এর জন্য দীর্ঘ দিন যাবত পেন্ডিং রেখে দেয়।

যার ফলে এ্যাডসেন্স এর আবেদনকারী কোন সমাধান না পেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখিন হন। কারন একজন আবেদনকারী চান যে, তার এ্যাডসেন্স একাউন্ট Approve হক বা বাতিল হক এ্যাডসেন্স টিম যেন তাকে ইমেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। অনুমোদন না হওয়ার ইমেইল পেলে একজন আবেদনকারী তার ব্লগে এ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য কি ধরনের সমস্যা রয়েছে সেটি সমাধান করে পুনরায় আবেদন করার সুযোগ পান। এ ক্ষেত্রে এ্যাডসেন্স এর নিকট থেকে কোন ধরনের ইমেইল না পেলে অনুমোদনের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপে গ্রহনের জন্য কোন কাজ করে যেতে পারেন না।

কিভাবে এ্যাডসেন্স আবেদন Review করা হয়?

এ্যাডসেন্স বিষয়ে অধিকাংশ মাঝারি জ্ঞান সম্পন্ন ব্লগারগণ বলে থাকেন যে, এ্যাডসেন্স দুই ভাবে আবেদন Review করে। কোন কোন ক্ষেত্রে গুগল বট/রোবট এ্যাডসেন্স Review করে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে গুগল স্পেশালিস্ট এ্যাডসেন্স Review করে।

তারা আরো বলে যখন গুগল বট আবেদন সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারে না তখন নাকি এ্যাডসেন্স এর একজন স্পেশালিস্ট আবেদন Review করে উত্তর দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে গুগল বট সমাধানে পৌছতে পারলে অল্প সময়ে আবেদন এর উত্তর পাওয়া যায় এবং গুগল বট সামাধান দিতে না পারলে নাকি এ্যাডসেন্স স্পেশালিস্ট Review করে উত্তর জানিয়ে দেওয়ার কারনে Review এর উত্তর পেতে অনেক বিলম্ব হয়।

আপনি একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে জেনে রাখুন এ্যাডসেন্স এর আবেদন গুগল বট বা এ্যাডসেন্স বট কখনো Review করে না। সব ক্ষেত্রেই একটি এ্যাডসেন্স এর আবেদন গুগল এ্যাডসেন্স এর একজন স্পেশালিস্ট Review করে অনুমোদন করে অথবা বাতিল করে। এ ক্ষেত্রে আপনার ব্লগ এ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য উপযুক্ত হলে অনুমোদন করবে।

আপনি আরেকটি বিষয় ক্লিয়ারভাবে জেনে রাখুন যে, আপনার ব্লগে যদি পর্যাপ্ত পরিমানে কনটেন্ট না থাকে, কপিরাইট কনটেন্ট থাকে, ব্লগের বয়স কম হয়, এ্যাডসেন্স রোল না মানেন তাহলে গুগল এ্যাডসেন্স টিম কখনো আপনার আবেদনটি Review এর জন্য Pending বা Waiting এ দীর্ঘ দিন রেখে দেবে না। কোন ব্লগে এ ধরনের সমস্যা থাকলে আবেদন পেন্ডিং না রেখে ৩-৭ দিনের মধ্যে আবেদন Reject করে দেবে। সেই সাথে আপনার ব্লগের সমস্যা সহ ভবিষ্যতে এ্যাডসেন্স এর আবেদন করার পূর্বে কি কি ব্যবস্থা নিবেন সে বিষয়েও সংক্ষেপে একটি নির্দেশনা দেবে।

এডসেন্স Review থাকার প্রধান দুটি কারণ

গুগল এ্যাডসেন্স টিম একটি এ্যাডসেন্স এর আবেদন পেন্ডিং রাখার দুটি কারন বলছে। একটি হচ্ছে আপনার ব্লগ/ওয়েবসাইটে এ্যাডসেন্স কোড প্রয়োজনীয় স্থানে না বসানো এবং দ্বিতীয় কারণ বলছে ব্লগে পর্যাপ্ত পেজ ভিউ না থাকে। এখানে আমি দুটি সমস্যা সম্পর্কে আপনাদের ক্লিয়ার করছি। অধিকন্তু আমার কথাটি বিশ্বাস না হলে গুগল এ্যাডসেন্স এরঅফিসিয়াল সাইট ও এ্যাডসেন্স এর অফিসিয়াল ইউটিউব ভিডিও হতে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন।

১। প্রয়োজনীয় স্থানে এ্যাডসেন্স কোড না বসানো

গুগল এ্যাডসেন্স এর আবেদন শুরুর পর এ্যাডসেন্স আবেদন সাবমিট করার পূর্বে এ্যাডসন্সের কোড ব্লগের থীমস এর অভ্যন্তরের <head> ট্যাগের নিচে অথবা </head> ট্যাগের উপরে বসাতে বলে। তারপর কোড বসনোর পর আপনার আবেদনটি সাবমিট হয় বা গ্রহন করে। এ কাজটি করার পর আমরা আর কোথাও কোন কোড বসাই না। অথচ গুগল এ্যাডসেন্স সাথে সাথে ইমেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় যে, আপনার ব্লগের প্রয়োজনীয় সকল স্থানে এ্যাডসেন্স কোড বসাতে হবে।

এখানে প্রয়োজনীয় স্থান বলতে আপনি যেখানে যেখানে এ্যাডসেন্স এর বিজ্ঞাপন শো করাতে চান সেই জায়গাগুলোকে বুঝায়। এ্যাডসেন্স এ বিষয়ে আরো বলে যে, আপনার ব্লগের যে পোস্ট ও পেজগুলোতে বেশী ট্রাফিক রয়েছে আপনি অবশ্যই সেই পোস্টগুলোতে এ্যাডসেন্স কোড যুক্ত করে রাখবেন। তাহলে এ্যাডসেন্স টিম আপনার ব্লগ সম্পর্কে সহজে ধারনা নিতে পারবে।

২। ব্লগের পেজ ভিউ কম

এখানে ব্লগে পেজ বলতে সকল ধরনের পোস্ট বুঝানো হয়েছে। আপনার ব্লগের পেজ ভিউ খুব কম হলে এ্যাডসেন্স আপনার আবেদনটি দীর্ঘ দিন Review এ রেখে দেয়। এ ক্ষেত্রে তারা আপনার আবেদন বাতিল না করে Review করার জন্য রাখে এবং ভিজিটর বাড়ছে কি না এনালাইস করে।

আসলে পেজ ভিউ প্রতিদিন কি পরিমানে হলে এ্যাডসেন্স আবেদন অনুমোদন করে সে বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়নি। আমার কাছে মনেহয়েছে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ পেজ ভিউ হলে গুগল এ্যাডসেন্স অনুমোদন করে। আমি ৫০ পেজ ভিউ দিয়েও আমার ব্লগে এ্যাডসেন্স অনুমোদন পেয়েছি। তবে আমার ব্লগে প্রচুর পরিমানে ভালোমানের ইউনিক কনটেন্ট ছিল।

শেষ কথা

পৃথিবীতে সবকিছুই নিয়মের মধ্যে চলছে। সবাইকে কোন না কোন নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। তা না হলে যে কোন ব্যক্তি বা বস্তুই মাঝ পথে হুচট খেতে হয়। নিয়ম না মেনে আজ পর্যন্ত কেউ কোন কাজেই সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।

ঠিক তেমনি গুগল এডসেন্স পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই এডসেন্স এর সবগুলো নিয়ম যথাযথভাবে পালন করতে হবে। কারণ বর্তমান বিশ্বে অনলাইন ভিত্তিক বিজ্ঞাপনের মধ্যে গুগল এডসেন্স এর অবস্থান সবার শীর্ষে। কাজে বুঝতেই পারছেন এডসেন্স অনুমোদন পাওয়ার জন্য আপনাকে কী কী করতে হবে?

Leave a Comment

নিচে কমেন্ট বক্স এ আপনার মূল্যবান মতামত দিন। যা লেখকের অনুপ্রেরণা জোগাবে ইনশা-আল্লাহ।